দূর করুন নিদ্রাহীনতা
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা প্রতিনিয়ত ঘুম নিয়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তারা প্রায় মাঝরাতে জেগে উঠে এবং নিদ্রাহীন অবস্থায় বাকি রাত কাটিয়ে দেয়, কারণ ঘুম ভাঙ্গার পরে তাদের ঘুম আর আসে না। যারা এই সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য আজ থাকছে কিছু টিপস।
ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রার কারণ
# নিদ্রাহীনতার কারন বিভিন্ন হতে পারে। যদিও এটা একটি সাধারণ ঘুম ব্যাধি কিন্তু এই ব্যাধির অন্তর্নিহিত কারন গুলো ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।
# স্ট্রেস বা মানসিক চাপ অনেক নিদ্রাহীন বা ইনসোমনিয়া রোগীদের অন্তর্নিহিত কারন হিসাবে দেখা গেছে। যারা প্রচুর মানসিক চাপ এবং অবসন্ন বোধ করেন তারাই সাধারণত নিদ্রাহীনতায় বা ইনসোমনিয়া ভুগেন।
# ইনসোমনিয়া বা নিদ্রাহীনতার আরও একটি সাধারণ কারন হচ্ছে বিষণ্নতা যা অধিক আশাহীনতা এবং মানসিক ভঙ্গুরতার সাথে সম্পৃক্ত।
# উদ্বেগ বা চিন্তার ক্রনিক অনুভূতিও অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়ার কারন। যারা দীর্ঘকাল ধরে এইধরনের অনুভূতিতে আবদ্ধ সাধারণত তারাই অনিদ্রায় ভুগেন।
# দীর্ঘকালীন ব্যাথা, হাঁপানি, ক্যান্সার এবং অন্যান্য চিকিৎসাধীন রোগীর নিদ্রাহীনতার মত রোগ ইনসোমনিয়ার কারন হতে পারে।
# মানসিক আঘাতের সমস্যাও নিদ্রাহীনতা বা ইনসোমনিয়ার কারন হতে পারে।
ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রার লক্ষণ
অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়ার সাধারণ ও স্থায়ী উপসর্গগুলো হলোঃ
যদিও তারা ক্লান্তি বোধ করে কিন্তু তাদের ঘুমাতে অনেক সমস্যা হয়।
রাতে বার বার তাদের ঘুম ভেঙে যায়।
পূর্ন রাত্রি ঘুমের জন্য ঘুমের বড়ির উপর নির্ভর করে।
সারাদিন তন্দ্রা ও অবষণ্ন বোধ।
একটি নির্দিষ্ট কাজে মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে পড়া।
এই ধরনের লক্ষণগুলো স্বাভাবিক মানুষের জীবনে মাঝে মাঝে ঘটতে পারে কিন্তু যারা স্থায়ীভাবে এই ধরনের সমস্যায় ভুগেন তারাই ইনসোমনিয়ায় আক্রান্ত।
ইনসোমনিয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রাকৃতিক সমাধান
ঘরোয়া এবং প্রাকৃতিক কিছু প্রতিবিধান রয়েছে যার মাধ্যমে ইনসোমনিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব
১. শান্ত পরিবেশ নিশ্চিত করুন
আপানাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি যখন ঘুমাবেন তখন আপানার চারপাশ খুব নিরব ও শান্তিপূর্ণ থাকে যা আপানার ঘুমকে আরো নিবিড় করবে।
শীতল সঙ্গীত শুনুন।
যখন আপনি ঘুমাবেন তখন যেন কোনো অট্ট গোলমাল বা উজ্জ্বল আলো না থাকে।
২. সঠিক বিছানাপত্র বাছাই
এইটা আপনার কাছে তুচ্ছ মনে হতে পারে কিন্তু আরামদায়ক বিছানাপত্র আপনাকে সহজে ঘুম পাড়িয়ে দিবে। সাধারনত যারা শক্ত বিছানায় ঘুমায় তাদের ঘুমে অনেক সমস্যা হয় এমনকি শোবার বালিশ মাথা রাখার মতো পর্যাপ্ত সহায়ক না হয় তাহলেও ঘুমাতে অনেক সমস্যা হয়।
বিছানাপত্র যাতে অনেক ফাঁপা এবং নরম হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
ঘাড় এবং মাথা সহায়ক যথেষ্ট বড় বালিশ হতে হবে যা কোনো অস্বস্তি ছারাই ঘুম নিয়ে আসবে।
৩. আলো মুক্ত শোবার ঘর নিশ্চিত করুন
আপনি যদি আপনার শোবার ঘর ঘুমানোর সময় অন্ধকারচ্ছন্ন করে রাখেন তাহলে আপনে ভালোভাবে ঘুমাতে সক্ষম হবেন।
কোনো আলোই আপনার চোখে ঘুম আনতে সাহায্য করবে না।
এই পদ্ধতি আপনার মনকে সহজেই শান্ত করতে কাজে দিবে এবং আপনার চোখে ঘুম আনতে সহায়ক হবে।
৪. বেড রুমের জন্য কিছু নিয়ম
শোবার ঘরে কিছু নির্দিষ্ট কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে, যেমনঃ
কোনো প্রকার তর্ক, বিতর্ক, ঝগড়া, ঝাটি চলবে না।
কোনো টেলিভিশন থাকবে না।
কোনো কাজ করা যাবে না।
এমনকি খাবারকেও না।
৫. ক্যাফেন ব্যাবহারে সীমাবদ্ধতা
কমপক্ষে ঘুমাতে যাওয়ার দুই ঘন্টা আগে ক্যাফেন নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যারা সাধারণত অতিরিক্ত ঘুম সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো হবে সন্ধ্যার পর থেকে ক্যাফেন জাতীয় পানীয় পান থেকে বিরত থাকা।
এটি উদ্দীপক হিসাবে পরিচিত
এটি অনিদ্রা এবং উদ্বেগের মাত্রাকে বাড়িয়ে তুলে
দিন প্রতি মাত্র দুই কাপ ক্যাফেন জাতীয় পানীয় পান করা যাবে।
৬. এলকোহল পানে সীমাবদ্ধতা
ইনসোমনিয়াক বা অনিদ্রা ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদেরকে অবশ্যই এলকোহল পান থেকে বিরত থাকতে হবে, বিশেষ করে গভীর রাতে পান, শক্তভাবে নিষিদ্ধ।
এলকোহল নিদ্রা বিঘ্নহের অন্যতম প্রধান ধরন হিসাবে পরিচিত।
যদিও এলকোহলের একটি প্রশান্তিদায়ক প্রভাব রয়েছে কিন্তু যখন এলকোহল পুরো মাত্রায় চড়ে যায় তখন তা প্রতিঘাত হিসাবে পরিণত হয় যা নিদ্রাতে বিপরিত প্রভাব ফেলে।
৭. সাধারণ শয়নকাল সূচি পালন
যারা ইনসোমনিয়াতে ভুগছেন তাদের প্রতিদিন ঘুমের জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিন রাখা গুরুত্বপূর্ণ। প্রশান্তিময় পরিবেশে যারা প্রতিদিন তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান তারা খুব ভালো ঘুমাতে পারেন অন্যদের চেয়ে যারা প্রতিদিন দেরিতে ঘুমাতে যান।
সঠিক শয়নকাল রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রুটিন অনুযায়ী প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে উঠতে হবে।
৮. সময়মত গোসল
যে সকল শিশুর ঘুমাতে সমস্যা হয় তাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট গোসলের সময় ঠিক করতে হবে যা সাহায্যকারী পদক্ষেপ হিসাবে কাজে দিবে।
উষ্ণ এবং শীতল গোসল শিশুদের স্নায়ুকে শান্ত করতে সাহায্য করে।
শয়নকালে গল্প শুনানো, ঘুমাতে অনেক সাহায্য করবে।
৯. ঘুমের প্রাকৃতিক ঔষধ দুধ
ঘরেই রয়েছে নিদ্রাহীনতার অন্যতম ও দীর্ঘতম প্রতিবিধান, এক গ্লাস গরম দুধ। ইনসোমনিয়াক বা অনিদ্রা রোগীদের অবশ্যই প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে মধু অথবা বাদাম মিশানো এক গ্লাস দুধ পান করা উচিত।
মধুর মধ্যে এক ধরনের প্রশান্তিদায়ক প্রভাব রয়েছে চিনির মত কিন্তু মধু চিনির থেকেও অনেক কম ক্ষতিকর ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য।
কৃত্রিম রাসায়নিক ঘুমের ঔষধের থেকেও এক গ্লাস গরম দুধের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়া অনেক ভাল।
১০. যোগব্যায়াম
বলা আছে যে যোগব্যায়েমর মাধ্যমে খুব সহজেই মানসিক চাপ, খন্ডিত উদ্বেগ এবং উদ্বিগ্নতকে দূর করা যায় যা খুব দ্রুত শরীর এবং মনকে শান্ত করে তুলে। বিভিন্ন যোগব্যায়াম চর্চা করা উচিত যা ধীরে ধীরে স্নায়ুকে শীতল করে তুলবে।
নিয়মিত ধ্যান, যোগব্যায়াম ও শিথিলকরণ পদ্ধতিগুলো আপনাকে অনেক প্রশান্তি দিবে।
রক্তসংবহনকে উন্নত করবে যা ভালো ঘুম পেটে সহায়ক।
প্রতিক্ষণ/এডি/এনজে